অণুগল্প : ইন্দ্রাণী দত্ত






 লকডাউনের ব্যালকনি

.......................................


ঘড়িতে পাঁচটা বাজলেই এখন নিয়ম করে সপ্তর্ষি আর দেবযানী তাদের ছোট্ট মেয়ে রেবাকে নিয়ে ব্যালকনির দোলনাটায় এসে বসে ৷এই ব্যালকনিটাই  এখন বিশাল মরুভূমির এক টুকরো মরুদ্যান!কি একটা মারাত্মক অসুখ জীবনটাকে যেন শোবার ঘরে,বসার ঘরে কিংবা রোজ বিকেলে ব্যালকনিতে  বন্দি করে রেখেছে !!তবে সরকারি চাকুরে বাবু  সপ্তর্ষির মাস মাইনেতে বসে বসে কাটছে একরকম বেশ!

দেবযানী আর সপ্তর্ষি  ব্যালকনিতে বসে বসে পথচলতি মানুষদের দেখে আর দুজন মিলে খুনসুটি করে,কখনো কখনো সপ্তর্ষি পাড়ার বয়স্ক মানুষদের চলন বলন নকল করে দেবযানী কে খানিকটা আনন্দ দেয়....!তবে তাদের ব্যঙ্গ-কৌতুকের খুব শক্তিশালী একটা উপাদান ছিল গফফুর আলি !,দিন আনা দিন খাওয়া নির্মানকর্মী   গফফুর  সারাদিন রোদে মুখ পুড়িয়ে ,একটা টিফিন ক্যান সাইকেলে ঝুলিয়ে তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে ঘরে ফিরতো !এই চ্যাটুজ্যে,বন্দোপাধ্যায়,পালেদের মাঝে পড়ে গফফুরের নিজেকে খুব অসহায় লাগে,সরকারি যা সাহায্য পেয়েছিল তাও শেষ,তাই অগত্যা কাজে যেতেই হয় !গফফুরকে ভাঙাচোরা সাইকেলের  প্যাডেল করত হয় খুব অগোছলো ভাবে..আর এই দৃশ্যটি ছিল দেবযানী আর সপ্তর্ষির মূল হাসির খোরাক ৷তারা দুজন ব্যালকনি দিয়ে গফফুর কে দেখতো এমন ভাবে  যেন পাড়াতে হঠাৎ ভিন গ্রহের প্রানী এসে সাইক্লিং করছে !!!
আসলে যাদের মাথার ওপর ছাদ থাকে,ঘরে খাবার থাকে, ব্যাংকে টাকা থাকে  তারা ধর্ম, জাতি, অসহায় মানুষ , এদের থেকে ফূর্তি নেওয়ার রসদ খোঁজে...

সেদিন আচমকাই রেবা ব্যালকনির দোলনা দিয়ে পড়ে গেল, মাথা ফেটে রক্তাক্ত কান্ড!... রেবাকে নিয়ে যাওয়া হলো  একটি বেসরকারী নার্সিংহোমে,  অনেকটা রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় ডাক্তারবাবু তাড়াতাড়ি " ও পজেটিভ" ব্লাড জোগাড় করতে বললেন !নাহলে যে বিপদ !!

 এদিকে ব্লাড ব্যাংক রক্তশূন্য, দিশেহারা সপ্তর্ষি    তার এক বন্ধুকে ফোন করলো রক্তের জন্য,সে তো এই বলেই নাকচ করে দিলো যে,"এই সময় রক্ত দিতে গেল সংক্রমণ হতে পারে" ক্ষমা কর ভাই, পরিবার আছে !!!

সপ্তর্ষি আর দেবযানী নিজেদের মনকে কঠিন করেই ফিরে এসেছিল  নার্সিংহোমে অপ্রত্যাশিত কিছু শুনবে বলে,কিন্তু ডাক্তার বাবু জানালো একজন স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে গেছে,রেবা ভালোই আছে এখন!পরে অবশ্য ডাক্তার বাবু ডোনারের নাম বলেছিলেন! 

এখনোও সপ্তর্ষি,দেবযানী ব্যালকনির  রেলিং  ধরে ঝুঁকে পড়ে পথচলতি মানুষদের দেখে,গফফুর কেও দেখে ,কিন্তু গফফুরকে দেখে তাদের আর হাসি  আসে না এখন, কেমন যেন একটা অপরাধবোধ জাগে !

..........................................................
.                  


নাম: ইন্দ্রনী দও
ঠিকানা :রথতলা,পূর্ব বর্ধমান


Share:

No comments:

Post a Comment